ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে ৫ বছর ধরে সরকারী চাকুরী করছেন পেকুয়ার ঝিনু!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ঠিকানা জালিয়াতি করে ভূঁয়া নাগরিকত্ব সনদে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ঝিুন আক্তার নামের এক প্রার্থী নিয়োগ পেয়ে গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারী চাকুরী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আর এদিকে ঠিকানা জালিয়াতি করে ভূঁয়া নাগরিকত্ব সনদে নিয়োগ পাওয়া পরিবার কল্যাণ সহকারী ঝিনু আক্তারের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আজ ৩১ অক্টোবর পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করেছেন, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড় আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহামুদুল করিম।

আওয়ামী লীগ নেতা মাহামুদুল করিমের দায়েরকৃত অভিযোগের সুত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ার সত্বেও টইটং ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা সেঁজে ভূঁয়া নাগরিকত্ব সনদ সৃজন করে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে গত ১২/১২/১৩ ইং তারিখে নিয়োগ পেয়েছেন উপজেলার বারবাকিয়া ইঊনিয়নের নাজির পাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের কন্যা ঝিনু আক্তার (রোল নং ৩৬১০০৪১)। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগের তৎকালীন পরিচালক (যুগ্ন সচিব) কাজী মো: শফিউল আলম স্বাক্ষরিত ২০০৩/৫৭৬ নং স্মারকে নিয়োগ পত্র ঝিনু আক্তাররের ভূঁয়া ঠিকানা ধনিয়াকাটা (সোনাইছড়ি), ডাকঘর টইটং হাজীর বাজার, উপজেলা: পেকুয়া, জেলা: কক্সবাজারের ঠিকানায় ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়েছিল। নিয়োগ পত্র পেয়ে ২০১৩ ইংরেজীর ২৫ ডিসেম্বরের পূর্বাহ্নে পেকুয়া উপজেলা পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগদান করেছিলেন। অথচ বারবাকিয়া ইউনিয়নে ওই পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি ও দেওয়া হয়নি। ঝিনু আক্তার নিজের স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে সরকারী চাকুরী বিধি লংঘন করে নিয়োগ পেয়েছেন। ঝিনু আক্তারের পিতা-মাতা উভয়ই বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড় নাজির পাড়া গ্রামের ভোটার।

এ বিষয়ে জানতে যোগযোগ করা হলে বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জানান, ঝিনু আক্তার, পিতা: জয়নাল আবেদীন তার ইউনিয়নের নাজির পাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং গত ২৭/১১/২০১৩ ইং তারিখে ৩৫১০ নম্বর জাতীয়তা সনদপত্র তার নামে ইস্যু করেছেন। ঝিনু আক্তার টইটং ইউনিয়নের কোন গ্রামেরই বাসিন্দা নন।

অভিযোগ উঠেছে, বারবাকিয়া ইউনিয়নে ওই পদ শুণ্য না থাকায় কৌশলে স্থায়ী ঠিকানা বারবাকিয়া নাজির পাড়া গ্রাম গোপণ করে পার্শ্ববর্তী টইটং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ধনিয়াকাটা গ্রামের বাসিন্দা মর্মে একটি ভূঁয়া সনদ তৈরী করে চাকুরীতে আবেদন করেছিল ঝিনু আক্তার। ২০১৩ সালের ২০১৩ ইংরেজী বছরের ৭ এপ্রিল দৈনিক কক্সবজার পত্রিকায় কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ‘‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’’ (মহিলা) পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি আহবান করেছিল। সে অনুযায়ী পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ৩/ক ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী (মহিলা) নিয়োগের জন্য এ ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা, আবাদী ঘোনা, ভেলুয়া পাড়া, আবদুল্লাহ পাড়া, মৌলভী পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা এসএসসি পাশ মহিলাদের কাছ থেকে আবেদন পত্র আহবান করা হীেছল।

জানা যায়, টইটংয়ের ৩/ক ইউনিট থেকে স্থায়ী বাসিন্দা ২ জন প্রার্থী আবেদন করেছিল তার মধ্যে ধনিয়াকাটা গ্রামের শামিমুল জান্নাত (যার রোল নং ৩৬১০০৭৭) লিখিত পরিক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ভূয়া নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে মোটা অংকের অর্থ ঘুষ দিয়ে অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও ঝিনু আকতার সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ পেয়েছেন। শামিমুল জান্নাত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা ভাল করলেও ওই পদে নিয়োগ পাননি। এ নিয়ে শামিমুল জান্নাত বাদী হয়ে গত ১৬/০৪/২০১৪ইংরেজী তারিখে কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ ২য় এর আদালতে ঝিনু আক্তারের নিয়োগ বাতিল চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। যার অপর মামলা নং ১১৪/১৪ইং।

শামিমুল জান্নাতের স্বামী মকবুল আলী জানান, মামলা দায়েরের পর রায় ঘোষনার পূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান রাজুর মধ্যস্থতায় মামলাটি আপমরা আপোস মীমাংসা করে ফেলি। মামলার রায় ঘোষনার পূর্বে আপোষ মীমাংসা কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, অনেকেই আমাদের ঝিনু আক্তারের পক্ষে সুপারিশ করেছেন। তাই মামলা মীমাংসা করেছিলাম।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবি এড. ফরিদুল আলম জানান, ওই ঘটনায় বাদী-বিবাদী মামলা আপোষ করলেও জালিয়াতির প্রসঙ্গটি তো এড়ানো যায়না। ঠিকানা জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ লাভ করে চাকুরীতে কর্মরত থাকা গুরুতর অনিয়ম ও দূর্নীতির শামিল। এটা অবশ্যই দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের পরিপন্থী।

এদিকে ভূঁয়া ঠিকানার বিষয়ে অভিযুক্ত ঝিনু আক্তারের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফরিদুল আলম জানান, পরিবার কল্যাণ সহকারী ঝিনু আক্তারের বিরুদ্ধে ঠিকানা জালিয়াতি করে চাকুরীতে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আজ ৩১ অক্টোবর একজন লোক ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য’র সাথে ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তার দপ্তর নিয়োগ পত্র ইস্যু করেনি। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। তথকনকার কর্মকর্তা ডা: দীপকব তালুকদারের সময়ে নিয়োগ কার্যাক্রম সম্পন্ন হয়েছিল।

পাঠকের মতামত: